Monday, August 29, 2016

প্রশ্নোত্তর

"তুই এতো জবাব দিস ছেলের কথার যে তোর ছেলের প্রশ্নের শেষ নেই ! বাবারে বাবা!"

আমার মা প্রায়শই বিরক্ত হন।  আমার ছেলের সত্যিই প্রশ্নের শেষ নেই।  আমার দুটো সমস্যা এই প্রশ্ন করা নিয়ে।  এক, সব প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না।  দুই, অনেক সময় এই প্রশ্নগুলো স্থান কাল পাত্র না দেখেই আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।  এছাড়া আমার বিশেষ কোনো সমস্যা নেই।  আমার মা এর ও বোধ হয় দ্বিতীয় কারণেই সমস্যা।  নামছি সিঁড়ি দিয়ে বা লিফট এ।  কেও লিফট এ উঠলেন।  আমি হাসলাম।  ভদ্রতার হাসি।  বা জিজ্ঞাসা করলাম, " কেমন আছেন?" ছেলে প্রায়  সঙ্গে সঙ্গে জেরা শুরু করে, "কে মা? তুমি চেনো? কোথায় থাকেন? কোন ফ্ল্যাটে?" বিড় বিড় করে উত্তর দিয়ে তাকে থামানো যায় না।  ফুটছে সে টগবগ করে, "হ্যাঁ? কি বললে ? মা, জোরে বলো না একটু।  শুনতে পাচ্ছি না " মা তখন অন্য ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে আপোলোজেটিক হাসি হাসছে।  লিফট থেকে নেমে একটু দূরে যেতেই আমার চিড়বিড়িয়ে রাগ "একটু অপেক্ষা করতে পারো না? কতবার বলেছি, পরে জিজ্ঞাসা করতে পারো কিন্তু তক্ষুনি জানতে হবে তোমায়!" একটুক্ষণও দমে যায় না তাতে সে।  "সরি সরি!" বলেই অন্য প্রশ্নে মন দেয়। তার প্রশ্নের আদি অন্ত নেই। আমি যেহেতু পণ করেছিলাম, দেবতা ঘটিত বা শয়তান ঘটিত কোনো রূপকথা দিয়ে আমার ছেলেকে কিছুই বোঝাবো না, তাই আমার কাজ অতি দুরূহ ছিল।  আমাকে জন্ম বৃত্তান্ত বোঝাতে হয়েছে, ছোটদের মতো করে কিন্তু, বিজ্ঞান সম্মত পথে।  মাসিক ধর্ম বোঝাতে হয়েছে, "ওসব বড় হলে বুঝবে!" না বলে। জাতি প্রথা থেকে চে  গুয়েভারা সবেতেই  আমার ছেলের অদম্য কৌতূহল।  এখন আমাদের একটা সিগন্যাল আছে যা দিয়ে আমি বুঝিয়ে দিই যে ব্যাপারটা এক্ষুনি সবার সামনে বলা ঠিক হবে না।  আমি বলি "তুমি কি এক্ষুনি শুনতে চাও?" সঙ্গে সঙ্গে ও বলে, " না না পরে বললেও হবে।" তাছাড়া ছেলেও কখনো কখনো আজকাল  কিছু একটা দেখিয়ে বলে , "মা, এটা দেখে নাও।  আমাকে বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে দিও এটা কি!"

প্রশ্ন করা ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার, আমাদের ছোটবেলায় এতো চল ছিল না। কিন্তু, আমার বাবা আমাদের ছোটবেলায় অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতেন।  আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি যতবার লোকাল ট্রেন এ বসে বাবার কাছে পর পর স্টেশন এর নাম জানতে চাইতাম,  ততবার একটুও বিরক্ত না হয়ে বাবা নামগুলো বলে দিতেন।  বাবাকে তখন হিরো মনে হতো! মনে হতো বাবা জানেন না এমন কিছুই নেই। এখন যখন ছেলেকে আমি মেট্রোতে  পর পর স্টপেজ এর নাম বলি, আমার সব সময়  বাবাকে মনে পড়ে।  আমি ভীষণ ভালোবাসতাম এরকম সব গুরুজনদের সাথে থাকতে যারা সর্বক্ষণ অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে তৈরী থাকতেন।  কিছু কিছু মানুষকে অদ্ভুত ভাবে মনে আছে তারা শুধু আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিতেন বলে।  আমি যখন ক্লাস এইট এ পড়ি তখন এক কাকু আমাকে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের কারণ বুঝিয়েছিলেন ও আমার সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন।  এতো ভালো করে বুঝেছিলাম ও পরে ডায়রিতে নোটে করে রেখেছিলাম যে এই প্রশ্নের উত্তর যখন দিল্লি স্কুল ওফ ইকোনোমিক্স এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় লিখতে হয়, তখনও সেই কথোপকথন মাথায় ভাসছিলো।  অথচ ততদিনে আমি সমাজশাস্ত্রে স্নাতক আর আরো অনেক বই পরে ফেলেছি।  কিন্তু ঐ কাকুর সামনে বসে প্রশ্নোত্তর এর মাধ্যমে শেখা সম্পূর্ণ আলাদা  অভিজ্ঞতা ছিল।  যা সারাজীবন মনে রয়ে গেছে।

সব কিছুকে প্রশ্ন করা বা ক্রিটিকাল থিংকিং কিন্তু আমি খানিকটা বাবাকে দেখে শিখেছি।  আর পুরোটা শিখেছি আমার দুই মামাতো ভাইকে দেখে।  যে বাবা আমার ছোটবেলায় অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি এই ডেমোক্র্যাটিক ট্র্যাডিশনটা কিন্তু বড়বেলায়, বা বলা যায়, মেজবেলায় (যখন আমি ১৩-১৪-১৫) বজায় রাখতে পারেন নি। বড় হবার সাথে সাথে বাড়ির অলিখিত নিয়মাবলীকে তিনি ভীষণ গম্ভীর ভাবে মানতে শুরু করেন এবং প্রশ্ন করলে ভয়ানক রেগে যেতেন।  এটা নিয়ে যখনই ভাবি, এর জন্যে অনেক ক্ষেত্রেই আমি সমাজব্যবস্থাকে দায়ী করি।  আমার বাবাকে হয়তো, না চাইতেও মেয়েদের সাথে দূরত্ব বানিয়ে নিতে হয়েছিল।  মেয়েদের সব প্রশ্নের উত্তর বাবাদের দেওয়ার কথা নয় এটা ধরে নিতে হয়েছিল সমাজকে মেনে। আমার ছোট বোনের ভাষায়, আমাদের দিদি বেশি প্রশ্ন করেনি তাই খুব প্রিয় ছিল সবার।  আমি ভীষণ প্রশ্ন করে খুবই মুশকিলে পড়তাম প্রায়ই।  ওর জন্যে তাই বাঁচতে গেলে কি করতে হবে,  স্পষ্ট হয়ে গেছিল। ওই যে সেই গানটা মনে আছে? "কথা বলো না।  কেও শব্দ করো না!" আমি কিন্তু প্রশ্ন করা ছাড়িনি।

অনেক প্রশ্নের উত্তর আমার মতোই আমার বাবাও জানতেন না।  কিন্তু আমাদের বাবাদের আমলে বাবাদের ঘাড়ে সবজান্তা হবার একটা দায় ছিল।  আমাদের এই দায়টা কম।  আর আমাদের কাছে গুগল আছে, তাই তথ্যের অভাব নেই।  আমি যদি মনে করি আমার ছেলের প্রশ্নের উত্তর দেব, তথ্য খুঁজে  অসম্ভব নয় আমার কাছে।  কিন্তু আসল কথা হলো, উত্তরটা দিতে চাই কি না।  ছোটদের প্রশ্নের শেষ নেই এবং প্রশ্নের ধারা সম্পর্কে কোনোরকম পূর্বানুমান করা অসম্ভব প্রায়।  তাই দুটো প্রধান কথা।  এক, তথ্য সংগ্রহে বাবা-মা আগ্রহী কি না।  এবং দুই, প্রশ্ন করাকে বাবা-মা ভালো মনে করে কি না।  দ্বিতীয় কথাটা প্রথমটার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  এটা এক ধরণের ভাবাদর্শের প্রশ্ন।  আপনি কি বিশ্বাস করেন প্রশ্ন করা উচিত? নাকি আনুগত্যই শেষ কথা?

আমাদের বাবা মাদের  সময়কার কথা বলি।  আমার মনে হয়, আমাদের বাবা মা রা গুগল না থাকা সত্ত্বেও বেশি তথ্য জানতেন।  আপনি সন্দেহ করতে পারেন আমি এখনো সেই "আমার বাবা সব জানে" রোগে ভুগছি। হতে পারে, কিন্তু কেন একথা বলছি বোঝাবার একটু চেষ্টা করবো।  আমাদের বাবা মা এরা বই পড়তেন।  বই লেখা মুশকিল।  ছাপানো তার থেকেও বেশি কঠিন কাজ।  লেখার অক্ষরে পাওয়া তথ্য তাই অনেক বেশি ভরসা যোগ্য ছিল। ওঁদের পড়া তথ্য তাই আমাদের খুব কাজের ছিল ।  এখনো আমাদের বাবা মা এরা লেখার অক্ষরে কিছু দেখলেই ভাবেন সেটা ঠিক কথা।  ইন্টারনেট হবার পর থেকে লেখার অক্ষরে যা দেখা যায় তার অধিকাংশই বিশ্বাসযোগ্য নয়।  এই নিয়ে আমি প্রায়ই আমার মা, মামী ও বাবা, কাকাদের সাবধান করে থাকি।  কিন্তু সেই সঙ্গে বুঝি যে, যে প্রজন্ম লেখা ও ছাপার অক্ষরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে এসেছেন তাদের জন্যে কি মুশকিল এটা ভাবা যে এই সমস্ত তথ্য সম্পর্ণ ভুল ও অসৎ-উদ্দেশ্য প্রনোদিত!

 যাই  হোক আসল কথায় ফিরে আসি।  তথ্যগত জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, আমাদের বাবা মা এরা উত্তর দিতে পছন্দ করতেন না।  তাঁদের ধারণা ছিল সব কথা  না জানা ভালো।  বা জানলে ছেলে মেয়েরা অকালেই পেকে যায়।  এবং এতো কথা বললে বাবা মা ও ছেলে মেয়ের মধ্যে যে একটা শ্রদ্ধাপূর্ণ দূরত্ব থাকা দরকার সেটা রাখা মুশকিল হয়ে যায়। এগুলো কি সত্যি? আমার ছেলের করা প্রশ্নের মতোই এর সব গুলোর জবাব আমার কাছে নেই।  আমার হাতেনাতে রিসার্চ এর স্যাম্পল ও একটি মাত্র।  যদি না আমার ছোট বোনের কথা ধরি।  যাকে আমি অনেক কিছু জানাতাম, প্রশ্ন না করা সত্ত্বেও। তাদের  উদাহরণ দিয়ে যদি প্রমান করতে যাই  তবে তা ধোপে টিকবে না।  তাই বাকি থাকে অন্যদের করা রিসার্চ।  রিসার্চ বলে, ছোটদের প্রশ্নের জবাব দিলে তারা উৎসাহ পায় ও আরো জানার চেষ্টা করে, যে উত্তর দিয়েছে তাকেই আরো জিজ্ঞাসা করে।  এ আর আমরা জানি না!  আসলে এটা আমরা বাবা মা এরা জানি বলেই গোড়াতেই বন্ধ করে দিতে চাই প্রশ্নোত্তরের পালা।

তথ্য জানলে কি ছেলে মেয়েরা পাকা হয়ে যায়? এর সম্বন্ধে রিসার্চ যা বলছে তা শুনলে অবশ্য একটু সন্দেহ হয়।  রিসার্চ বলছে, ছোটরা, মেজবেলায় ভীষণ কৌতূহলী হয়।  যদি তাদের প্রশ্নের সদুত্তর তারা না পায়, তাহলে তারা নিজেরা খুঁজে নিতে চেষ্টা করে উত্তর।  আর এই খুঁজে নেওয়াটা বেশ বিপজ্জনক হতে পারে। উদাহরণ হিসাবে বলি, নেদারল্যান্ড এ সব স্কুলে যৌন শিক্ষা বাধ্যতা মূলক।  আমেরিকা যুক্তরাজ্যে স্কুলে যৌন শিক্ষা দেওয়া হয় না। প্রথম যৌন সম্পর্ক হয় নেদারল্যান্ড এ ১৮ বছরের পরে, অন্য দিকে আমেরিকা যুক্তরাজ্যে প্রথম যৌন সম্পর্কের বয়েস ১৫।  আমেরিকাতে টিনএজ গর্ভধারণ একটা খুব বড় সমস্যা।  এটা লিখতে লিখতেই আমি দেখতে পাচ্ছি আমার মা চোখ বড় বড় করে ফেলেছেন! এ'সব কথা কেন! এইসব কথা নিয়ে আমরা বাড়িতে আলোচনা করি না। আর সেটা বলতে না বলতেই মনে পড়লো ভারতে আট কোটি মেয়েরা ১৮ বছরের হবার আগেই বাচ্চার জন্ম দেয়।  যদি যৌনশিক্ষা হতো, আমার ধারণা এতো বাচ্চাকে এতো তাড়াতাড়ি মা হতে হতো না। বিজ্ঞান বলে সমকামীদের নিয়ে কথা বললে কেও সমকামী হয়ে যায় না কিন্তু এতে নিজেকে সমকামী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারার পর হীনমন্যতার শিকার হয়ে আত্মহননের দিকে এগিয়ে যাবার সম্ভবনা কমে যায়। শ্রদ্ধাপূর্ণ দূরত্বের ব্যাপারটা ক্রমশই বদলাচ্ছে।  আমাদের সময়েও অনেক বাবা মা ছেলে মেয়ের বন্ধু ছিলেন।  এখনো অনেক বাবা মা বন্ধু হতে পারেন না।  এরকম চলতেই থাকবে। আশাকরি আগামীদিনে আরো বেশি বাবা মা ছেলে মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার মধ্যে যৌক্তিকতা খুঁজে পাবেন।

আমি প্রশ্নোত্তর এর খুব বড়ো সমর্থক।  আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি, শিক্ষার কাজই হচ্ছে প্রশ্ন করতে শেখানো।  আর বাবা মা ই তো প্রথম শিক্ষক, তাই না? প্রশ্ন অনেক সময়ই অস্বস্তিতে ফেলে। একেবারে ঠিক কথা! কিন্তু মানুষ অস্বস্তিতে না পড়লে তো স্থিতি বদলায় না।  স্থিতি না বদলানো হলো জড়তা।  আর জড়তা না কাটলে, আমার বাবার শেখানো  "চরেইবেতি চরেইবেতি" র কি হবে ! 

Letter to the Lost and Found Department

He had to get down two stations before mine!
The face that I found sleeping when I boarded the train.
I wish he slept all through.
I would not have had to steal glances at his reflection in the window mirrors, otherwise.

I got onto the train thinking its going to be a long journey at the end of the day!
And now I want to go back to that 8.45 train every day!
Or does he ride the train only on Sundays?
Or probably that was the only day!
Was he coming back from a weekend trip?
He fell asleep, remember?
He had a backpack for sure! a black one.
What did it have? Camera? Or just clothes?

In between, the person seated between us, got down from the train, but I could not bring myself to casually slide towards him.
I want to kick myself for that! I am always like that!
I still regret not kissing in Malaysia and not going to Granada with one South American friend, who asked.

I tell myself every time, "You don't have much time!
You can't afford to live in regret!
Come on! Show some initiative."
But alas! who is listening to me? Not me at least!

I have a feeling he stole a few glances too.
I know, I know, it could just be my wishful thinking.
But what’s so bad in thinking he also regretted not sliding casually towards me?
Or not being a little closer while tying his shoelaces?
Or not missing his usual stop that day?
May be he is in the last compartment of the train tonight, looking for me.

Whats so bad in thinking he just can’t fall asleep today! 

Who is Fumbling on Forgiveness After All?

It has been a long time since I have been musing on this topic. I wanted to write on it quite a few times but I, even I, fear being misunder...