Saturday, August 11, 2018

বোঝা না বোঝার গল্প

দীপা একটু চাপা স্বভাবের মেয়ে। 
নিমতার দিকে বাড়ি ওর।  
ওকে বলছে অনেকে ক্ষেদের সুরে, তারা বুঝতে পারেনি ওকে!    
ওর স্বভাবই দায়ী তার জন্যে।  

সমর বুঝতে পারেনি, দীপা সারাদিন না খেয়ে এতো কষ্টে ছিল যে,
সেই দুপুরে প্রেমের কথা শুনতে ওর বিশ্রী লেগেছিল'!
সমর বুঝতে পারেনি দীপা সত্যি সত্যিই  বোঝাতে চেয়েছিল' ওর কষ্টটা,
"আমার ভীষণ খিদে পায় জানো!"
মুচকি হেসে, আদুরে গলায় সমর বলেছিল', "হ্যাংলা কোথাকার!"
অনেক বছর পর ওদের আবার যখন দেখা হয়, 
ও বলেছিল', আরও অনেক বেশি বিচলিত হওয়া উচিৎ ছিল দীপার।  
প্রায় কেঁদে ফেলার উপক্রম করলে, সমর হয়তো বুঝতে পারতো, 
ও সত্যিই খেতে পাচ্ছিল' না ওই সময়! 
 দীপা প্রায় কখনই কারোর সামনে কেঁদে ফেলতে পারেনি।  
আর তাই দীপাকে ঠিক বুঝে ওঠা হয়নি কারো।  
সমর বলেছিলো, "বুঝিয়ে দিতে পারতে তো?" 

অশোককে  অনেকেই বলেছে, 
ওর এই উদ্ভট ভাবনাচিন্তা তাদের বোঝার বাইরে!
তাদের গলায় রাগ ছিল।  বা ছিল ওকে নিয়ে দুশ্চিন্তা।  
তারা ওকে প্রায়ই বুঝিয়েছে, "কাজ আর বাড়ি আলাদা!"
"এতো আদর্শ বাড়ি বয়ে আনলে, ঘর সংসার হয় না। " 
"Personal is political" অশোক বলাতে হেসে উঠেছিল বিক্রম।  
"কি বাজে বকছিস! এরকম কিছু হয় না!"
সেদিন মার্চের বিকেলে ওরাও এসেছিলো,
দশ লক্ষ মানুষ যখন উঠে দাঁড়িয়েছিল নারী-হিংসার বিরুদ্ধে।  
"এই সমস্ত কাজকে ব্যক্তিগত সমর্থন জানাতে আসি আমি,"
"হলামই বা ব্যাঙ্ক এর লোক", বিক্রম বলেছিলো।  
একটু ইতস্তত করেছিল অশোক, শেষ পর্যন্ত মনে না করিয়ে দিয়ে পারেনি যে 
গীতার প্রতি বিক্রমেরে ব্যবহারটা ঠিক শান্তি বা সমানতার আওতায় ফেলা যায় না।  
"ওটা ব্যক্তিগত ব্যাপার আমাদের।  সব জায়গায় সব কথা টেনে আনিস না !" 
ময়দানের ব্যক্তিগত আর ঘরের ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোর পার্থক্য অশোক এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।  
পারবে বলে মনেও হয় না।  

জাভেদের বহুবার মনে হয়েছে, বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব একমাত্র ওর।  
মা বাবা, দাদা বৌদির সারা সপ্তাহের সমস্ত না-বোঝার আক্ষেপরা,
 ওর অপেক্ষায় থাকে।
ওর রবিবারগুলো, সপ্তাহের বাকি দিন গুলোর থেকেও ভারী হয়ে ওঠে কখনো কখনো।     
ও বুঝে বা না বুঝে, সারাদিন বোঝার ভাণ করে, সেইদিন।  
রবিবার ওর বুঝবার দিন।  
সবার বরাদ্দ সময় আছে।  
সবাই বুঝে নেয় নিজের নিজের পাওনা।  
সোমবার এলে ধোয়া জামাকাপড়ের ব্যাগ হাতে আবার রওনা হয় ও।  
ভালোই আছে, খালি বাবা বিয়ের কথা বললে জাভেদ ভয় পায়।  
আরও একজনকে বুঝে চলার বোঝা ও পারবে কি বইতে?
যদি সেই গল্পের উটের মতো ওরও পিঠ ভেঙে পড়ে ?
বন্ধুরা বলেছে ওকে, ওতো না বুঝলেই তো হয়।  
ও মনে মনে জানে, খুব সাধারণ চেহারা ও স্বভাবের জাভেদকে
এই বুঝে চলাটুকুর জন্যেই বাড়ির লোকে সহ্য করে!
নাকি ওরা সত্যিই ভালোবাসে ওকে? 
পরীক্ষা করে দেখার সাহস নেই বাড়ির সেজো ছেলে জাভেদের।  

​"তোকে আমি বড্ডো ভালোবাসি"  গলা ফাটিয়ে বলেছিলো স্মিতা। 
ওর রিনরিনে গলা আকাশ ছুঁচ্ছিল সেদিন।  
স্মিতার বাচ্চাদের মতো সরু পিঠে হালকা চাপড় মেরে বলেছিল তিমির, 
" ভালোবাসা!! বাহ্ বাহ্! দারুন কথা বললি!
"তুইও প্রেম করতে চাস, বল?"
জোরে হেসে উঠেছিলো দুজনেই,
আকাশের দিকে ছোঁড়া ওদের হাতে হাতে তালির শব্দও যেন হেসে উঠেছিল সেই সঙ্গে ।  

সেই বছরের শেষের দিকে,
তিমিরের বিয়ের খবরে থমকে গেছিলো স্মিতা...
 তিমির বলেছিলো,"বোঝার মতো করে বলবি তো! 
অমনি করে ভালোবাসার কথা বলে নাকি কেও?" 
রিনরিনে গলাটা এবার যেন একটু খাদের দিকে নামছিলো। 
"পারবি তুই তিমির? বোঝার পরও পারবি?" 
বুঝলে কি পারতো, প্রশ্নটা তিমিরেরও ছিল সেদিন, 
আর বোঝেনি কি সত্যিই সে? সেই প্রশ্নটাও!   

আহ! কেন যে বুঝে নিতে হয়? 
বুঝে নেবার দরকার কি? না বুঝলে কি হয়? 
কেন বুঝে যেতে হয় কারোর চলে যাওয়া
কেন অবুঝ হলে ফেরত আসে না তারা,
ভাবে শাবানা মনে মনে। 
ভাবে আকাশ যেরকম কাঁদে কারোর কোনো তোয়াক্কা না করে,
আকাশের যেমন বুঝদার হবার দায় নেই, তারও না থাকলে ভালো হতো!
বুঝদার হয়ে, কিই বা ভালো হয়েছে কারোর! 
নিজের ওপরেই রেগে  হাতের চাবি ছোঁড়ে দেয়ালে শাবানা, 
আর মন দিয়ে দেখে দেওয়ালের গায়ের ক্ষত। 
দেয়াল ক্ষত বিক্ষত হয়েও চুপ করে থাকে।   

আর ফিস ফিস করে বলে দীপা  সমরকে, "বুঝতে পারলে কি কিছু বদলে যায়?" 

Who is Fumbling on Forgiveness After All?

It has been a long time since I have been musing on this topic. I wanted to write on it quite a few times but I, even I, fear being misunder...