Thursday, June 24, 2021

তুমিই সেই নারী

......................................................
তুমি যদি একদিন এমন নারী হয়ে ওঠো 
পুরুষ যার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে চায়
তুমি ওদের তাকিয়ে থাকতে দিতে পারো - 
কিন্তু সেই দৃষ্টিকে কখনই বাড়ানো হাত ভেবে ভুল করো না
অথবা ভেবে নিও না কোনো জানলা কিংবা আয়না।  

ওদের দেখতে দিও 
নারী আসলে কেমন দেখতে হয়
হয়তো কোনও নারীকে ওরা আগে ঠিক করে দেখেইনি

একদিন যদি তুমি এমন নারী হয়ে ওঠো -  
পুরুষ যার ছোঁয়া পেতে চায়
তুমি ওদের তোমাকে ছুঁতে দিতে পারো

কখনো কখনো বুঝতে পারবে ওরা ঠিক তোমাকে ছুঁতে চায়নি।  
ওরা নাগাল পেতে চেয়েছিল কোনও বোতলের 
কোনও দরজার 
বা নিত্যদিনের নিশ্চিন্ত স্যান্ডউইচের 
কিংবা পুলিৎজার পুরস্কারের
অথবা অন্য কোনও নারীর।
কিন্তু ওদের হাত প্রথমে তোমাকে নাগালে পেয়েছে।   


তুমি নিজেকে ওদের অভিভাবক ভেবে ভুল করো না
স্বপ্ন-সুন্দরী ভেবেও নয়
বা কোনো প্রতিশ্রুতি।  
তুমি না ওদের শিকার
না জলখাবার।  


তুমি একজন পূর্ণাঙ্গ নারী।  
চামড়া, হাড়, শিরা, ধমনী,
চুল আর ঘামে মাখামাখি এক নারী
তুমি কোনও রূপক নও
নও কোনও অজুহাত,
এমনকী কোনো কৈফিয়ৎও নও

তুমি যদি একদিন এমন নারী হয়ে ওঠো
যাকে পুরুষ আলিঙ্গন করতে চায়
তুমি আলিঙ্গন করতে দিতে পারো।  

পুরুষরা সারাদিন নিজেদের শরীরটাকে  টানটান সোজা করে রাখে 
আর হাজার বছরের বিবর্তনের পরেও এই কৃত্রিম ঋজুতায়   
দিনশেষে ওদের পেশী শক্ত হয়ে যায়
টান ধরে হাতে, শিরদাঁড়ায়। 
 
শুধুমাত্র কিছু পুরুষই  জানে নিজের দেহকে প্রশ্নচিহ্নর মতো বাঁকিয়ে
নারীকে আলিঙ্গনে মুড়ে রাখতে কেমন লাগে
শুধু কিছু পুরুষই পারবে স্বীকার করে নিতে 
যেসব উত্তরগুলোর নাগাল,
ওরা এতদিনে সহজেই পেয়ে যাবে ভেবেছিলো ,
আজও সেই সব উত্তর ওদের কাছে নেই;
কিছু পুরুষ তোমাকে সমাধানের  মতো  আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইবে 
 কিন্তু ভুলে যেও না, তুমি সমাধান নও।  

তুমি সমস্যাও নও
কবিতা নও
ধাঁধা নও, উপহাসও নও
তুমি শেষ কথাও নও!

শোনো, তুমি একদন যদি এমন নারী হয়ে উঠতে চাও
পুরুষ যাকে ভালোবাসতে চায়,
তুমি ওদের ভালোবাসতে দিতে পারো।  

কিন্তু পাওয়া ভালোবাসা আর নিজে ভালোবাসা এক না
যখন তুমি নিজে ভীষণ ভালোবেসে ফেলো
সে যেন ছোট্ট কোনও মেয়ের এই ডোবা, ওই ডোবায় সাঁতার কেটে
 হঠাৎই মাঝ-সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়া -    
যেন হঠাৎ বুঝতে পারা আমারও দুটো হাত আছে!
আর সব দর্শক-দীঘা খালি হয়ে যাবার পর,
সেই দুটো হাত বাড়িয়ে মল্লভূমির দড়ি আঁকড়ে থাকা।  

সময় নষ্ট কোরো না এই ভেবে যে 
তুমি সেই ধরণের নারী কি না
পুরুষ যাকে কষ্ট দেবে।  
যদি কোনও পুরুষ চলে যায় তোমার হৃদয়কে তীক্ষ্ণ সাইরেনে পরিণত করে 
হকে জানে! তুমি হয়তো সুর মিলিয়ে তার-সপ্তকে গাইতে শিখে যাবে - 

সমুদ্রের নোনাজলের আমাদেরকে দমবন্ধ করে মেরে ফেলার চেষ্টা সত্ত্বেও 
সমুদ্রকে না ভালোবেসে কি বাঁচা যায়?

নিজের সব সিন্ধান্তের জন্যে নিজেকে ক্ষমা করে দিও
সেগুলোর জন্যেও
যাদের তুমি রাত্রে আদর করে ঘুম পাড়ানোর সময় "ভুল" বলে ডাকো!

আর হ্যাঁ - 
তুমিই সেই নারী 
যে এখনো নিজের জন্যে এক টুকরো জায়গা খুঁজে চলেছে
কিন্তু,  শুধু একবার দুনিয়ার সব মূর্তিগুলো ভেঙে পড়তে দাও
দেখবে তুমি নিজেই নিজের সেই জায়গা!

তুমি দেখবে - 
তুমিই সেই নারী, 
যে নিজেই গড়ে নিতে পারে -
কারণ গড়ে নেবার জন্যেই তোমার জন্ম!


Original: The Type by Sarah Kay
Translation: Nayana
Artwork: Vandana Tulachan, Nepal
Image of the Poet: The Daily

Saturday, June 19, 2021

মুচিরাম

 - সুদামা পাণ্ডে 'ধূমিল' 

...........................................................

Image courtesy: Google
বাটালি থেকে চোখ তুলে 

    আমাকে এক মুহূর্ত দেখলো

    ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত 

আর তারপর মৃদু স্বরে হেসে বললো ―

বাবু, সত্যি কথা বলি ―

আমার চোখে কেউ ছোট নয়

কেউ বড়োও নয়

আমার কাছে প্রত্যেকটা মানুষ যেন আদতে এক জোড়া জুতো

যারা আমার সামনে অপেক্ষা করে আছে জরুরী মেরামতের জন্যে।  

আর  আসল কথা কী জানেন?

যে যেমনই হোক, যেখানেই থাকুক 

আজকাল কোনো মানুষই জুতোর মাপের বাইরে নয়


তবুও আমি সবসময় মনে রাখি যে

পেশাদারী হাত আর ফাটা জুতোর মধ্যেখানে,

কোথাও না কোথাও একটা আদত মানুষ লুকিয়ে আছে

যার শরীর- মনের ওপর দিয়ে সেলাই এর ফোঁড় চলে

যে ফাটা জুতোর কোন থেকে উঁকি মারা কড়ি আঙ্গুলে লাগা আঘাত

নিজের বুকে হাতুড়ির ঘা এর মতো করে সহ্য করে।    


অনেক রকম জুতো আসে আমার কাছে 

তারা আমাকে নানা রকম মানুষের গল্প শোনায়  

ওরা আমাকে বলে, প্রত্যেকটা মানুষের আলাদা চেহারা

আর সবার আলাদা আলাদা ধরণ!

যেমন ধরুন, এমন এক জোড়া জুতো নিয়ে এলো কেউ

যাকে ঠিক জুতোও বলা যায় না - 

যেন কিছু চাকতির একটা মোটা থলি!

তাকেও কোনো কোনো মানুষ পায়ে দেয় কিন্তু 

সেই মানুষ  যাকে গুটিবসন্ত খুঁটে খুঁটে খেয়েছে

সেই মানুষের জীবনে আবার আশা আকাঙ্খা - 

যেন টেলিফোনের পোস্টে আটকে থাকা

ফড়ফড় শব্দে ঘুড়ির উড়ান!


   আমি বলতে চাই তাকে ―

   "কেন যে পয়সা জলে ফেলবে, বাবু?"

কিন্তু আমার আওয়াজ কাঁপে

আমি বুঝতে পারি ― ভেতর থেকে যেন  কেউ বলে ওঠে

"তুই কি রকম মানুষ রে? নিজের পেশার ওপর থুতু ফেলিস্?"

বিশ্বাস করুন 

    সেই সময় আমি ওই চাকতিগুলোর জায়গায়

নিজের চোখ সেলাই করি - 

আর নিজের পেশায় আটকে থাকা এই মানুষটাকে

কোনোরকমে সহ্য করি!


আরেক জোড়া জুতো আসে কখনো কখনো  - 

যা দিয়ে পা সাজিয়ে, মানুষ বিকেলে ঘুরতে বেরোয়

সেই মানুষ  বুদ্ধিমানও নয়  

সময় নিয়ে সচেতনও নয়  

তার চোখ ভর্তি শুধু লোভ

আর আছে হাত ঘড়ি

তার যাবার কোথাও নেই 

কিন্তু তাড়াহুড়ো সারা শরীরে

স্বভাবে সে এক্কেবারে ব্যবসায়ী

বা সওদাগর

কিন্তু কায়দা এমন, যেন হিটলারের নাতি!

"এটা বাঁধো, ওটা কাটো, এখানে ঠোকো, ওখানে মারো

ঘষে দাও, আরো  চকচকে করো

জুতোটাকে এমন করে দাও যেনো ...

উফঃ! বড্ডো গরম বাবা!"

রুমাল দিয়ে হাওয়া করতে থাকে নিজেকে

প্যাচপ্যাচে গরমকে গোটা চারেক গালি দিতে দিতে 

রাস্তার এ জাতি, সে জাতির লোকেদের

বাঁদরের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে! 


মোদ্দা কথা হলো, পাক্কা একটি ঘন্টা খাটিয়ে নেয়

কিন্তু পয়সা দেবার সময় হলেই,

বেমালুম মাথা নেড়ে এড়িয়ে যায়!

বলে, "ভদ্রলোক পেয়ে ডাকাতি করছো!"

  তাড়াতাড়ি কয়েকটা সিকি ফেলে এগিয়ে যায় 

আর কয়েক পা এগোতে না এগোতেই

চিৎকার করে লাফিয়ে ওঠে! 

 

আসলে কেউ যখন পেশার ওপর আঘাত করে

তখন একটা না একটা ছোট চোরা পেরেক

জুতোর মধ্যে লুকিয়ে রয়ে যায়

আর সুযোগ পাওয়া মাত্র

    ফুটে যায় আঙুলে ।  


কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমি কোনো ভুল ধারণা নিয়ে বেঁচে আছি

আমি সবসময় মনে রাখি যে,

    জুতো আর আমার পেশাদারী হাতের মধ্যেখানে 

কোথাও না কোথাও এক আস্ত মানুষ আছে

যার ওপরে নিত্য সেলাইয়ের ফোঁড় পড়ে  

আর যে জুতো থেকে উঁকি মারা আঙুলে লেগে যাওয়া চোট

নিজের বুকে

হাতুড়ির ঘা এর মতো বয়ে চলে। 


আর বাবু, আসল কথা কি জানেন -

বেঁচে থাকার পিছনে যদি কোনো কারণই না থাকে  

তাহলে নামাবলী বেচে বা বেশ্যাদের দালালী করে

টাকা রোজগারের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।  

আর ঠিক এই জায়গাটাতেই প্রত্যেকটা মানুষ

নিজের পেশাকে পেছনে ফেলে

ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়  ।  

সব মানুষের মতো ভাষা ওকেও ছিঁড়ে খায়

শীত গ্রীষ্ম জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারে


আপনি এই বসন্ত ঋতু কথাই ধরুন না কেন,

বসন্ত এই দিনগুলোকে এমন টেনে টুনে বিছায় 

যেন কোনো তাঁতের ওপর খাটিয়েছে - 

আর ওই দেখুন,

গাছের ওপর হাজার হাজার লাল লাল পাতার বাহার

যেন রোদে শুকানোর জন্যে রেখে দিয়েছে 

সত্যি বলছি ―

    সেই সময় বাটালিকে মুঠোর মধ্যে ধরে কাজ করে যাওয়া ভারী মুশকিল 

চোখ কোথাও চায় - 

আর হাত যায় অন্য কোথাও ।  

কোনো গোমড়া মুখো বাচ্চার মতোই তখন 

কাজে আসতে এক্কেবারে রাজী হয় না আমার মন।  


আমার কি মনে হয় জানেন?    

এই ভদ্র সভ্য চামড়ার পেছনে

যেন একটা আস্ত জঙ্গল লুকিয়ে আছে

যা গাছকে হাতিয়ার বানিয়ে 

অত্যাচার করে চলে মানুষের ওপরে 

আর এটা শুনে চমকে ওঠার কিছু নেই, 

এটাও একটা ভেবে দেখার মতো বিষয়! 


কিন্তু, জীবনকে যারা শুধু বই দিয়ে মাপে

সত্যি আর অনুভূতির মধ্যেখানের

কোনো রক্তাল্প দুর্বল মুহূর্তে সেই ভীরু-কাপুরুষ মানুষ 

হয়তো খুব সহজেই বলে উঠবে

"বন্ধু, তুই মুচি না! তুই কবি!" 


আসলে সে এক জব্বর ভুল ভাবনার শিকার

সে ভাবে মানুষের পেশাই জাতি নির্ধারণ করে

আর ভাষার ওপর মানুষের নয়, 

যেন কোনো জাতির অধিকার থাকে !


যখন কী না আসল কথা হলো

আগুন সবাইকেই জ্বালায়,

সত্যি সবার ভেতর দিয়ে সমান ভাবে বয়ে চলে 

কেউ কেউ সেই সত্যি বলার শব্দ খুঁজে পেয়েছে  

আর কেউ কেউ অক্ষরের সামনে এখনো অন্ধ!

তারা সব অন্যায় চুপচাপ মেনে নেয়,  

পেটের আগুনকে ভয় পায় - 

যদিও আমি জানি "একটা 'না' বলে চিৎকার"  

আর "একটা বুঝদার চুপ"

দুটোর আদতে একই মানে -

কেননা ভবিষ্যৎ  গড়ে তুলতে, "চুপ" আর "চিৎকার"

নিজের নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে, 

নিজেদের ভূমিকা পালন করে চলে।  


original: http://bolbihar.in/2017/07/09/mochiram-a-poetry-by-dhoomil/

Who is Fumbling on Forgiveness After All?

It has been a long time since I have been musing on this topic. I wanted to write on it quite a few times but I, even I, fear being misunder...